এতে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন অনেক রোগী ও তাদের পরিবার-পরিজন। উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়নের বাজারে গড়ে উঠেছে ফার্মাসিস্ট, প্রশিক্ষণ ছাড়া ও ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন শত শত ফার্মেসী। ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।
বিশেষ করে, উপজেলা শহরের কাছাকাছি বাজারগুলোতে,কালিগঞ্জ বাজার, নিউমার্কেট, ভবানিপুর বাজার, বাংলা বাজার, মহেশপুর বাজার, নিয়ামতি বাজার,বোতরা বাজার,শ্যামপুর বাজার,বোয়ালিয়া বাজার, লক্ষীপাশা বাজার,দাদুর হাট-বাজার, উল্লেখিত বাজারে সবচেয়ে বেশী পরিলক্ষিত হয়েছে।
প্রথম সকাল অনুসন্ধানে দেখা গেছে এক অভিনব প্রতারক ভুয়া ডাক্তার পাদ্রিশিবপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর সুলিশ বাজারের হাওলাদার ফার্মেসীর পরিচালক মোঃ অাবু সাঈদ। যিনি নিজেই ড্রাগ লাইসেন্স এর লাইসেন্স কপি বানিয়ে নিয়েছেন। অথচ ফার্মাসিস্ট প্রশিক্ষণ ছাড়া ও ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন এমন ব্যাক্তির দোকানে রেজিস্টার্ড চিকিৎসক ছাড়াই ঐ এলাকার শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, এমনকি অন্তঃসত্তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার এই প্রতারনার ফাদে পরে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।
এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাচ্ছেন ওইসব ফার্মেসী মালিকগুলো। কারণ ঐ এলাকার সাধারণ মানুষ রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের কাছে আসেন না। তারা তাদের পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর বাজারের ফার্মেসীর শরণাপন্ন হয়ে রোগের বর্ণনা দিয়ে ওষুধ নেন। এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে ফার্মেসী মালিক মোঃ অাবু সাঈদ। ফার্মেসী গুলো চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চমাত্রায় এজিথ্রোমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের ট্যাবলেট ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, নিষিদ্ধ, ভারতীয়, নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের নানা ধরনের ঔষধ অবাধে বিক্রি করে আসছেন ভুয়া ডাঃ মোঃ অাবু সাঈদ।
এছাড়াও উপজেলার কলসকাঠি ও নলুয়া বাজার সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বাজারগুলোতে মুদি দোকানে অবাদে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় নিষিদ্ধ যৌন উত্তেজক ঔষধ যার ফলে একদিকে যেমন ঔষধ ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অন্যদিকে সাধারণ ক্রেতারা প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪০ অনুসারে কারও ঔষধের দোকান বা ফার্মেসি দেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে প্রথমেই কমপক্ষে ছয় মাসের ফার্মাসিস্ট কোর্স করে সনদ সংগ্রহ করতে হবে। পরে সংশ্নিষ্ট ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ে ফার্মাসিস্ট সনদ জমা দিয়ে ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে।
ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২-এর ৪ নম্বরের ১৩ নম্বর ধারায় ‘ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ’ শিরোনামে উল্লেখ্য আছে, কোনো খুচরা বিক্রেতা বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলের কোনো রেজিস্ট্রারের রেজিস্ট্রিভুক্ত ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধান ছাড়া কোনো ঔষধ বিক্রি করতে পারবে না। কিন্তু এ নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ঔষধ বিক্রি হচ্ছে এসব ফার্মেসীতে। কয়েকজন সচেতন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন ফার্মেসীতে আর বিশেষজ্ঞ লোকের দরকার হয় না।
ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা বলে দেন কোন ঔষধ কী কাজে লাগে- সেই অনুযায়ী ঔষধ বিক্রি হয়। এ ছাড়া অনেক ঔষধের দোকানে নিম্নমানের ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা ঔষধ বিক্রি করে দেন। ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ বিক্রির ক্ষেত্রে ভালোমানের ঔষধের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি কমিশন নেওয়া হচ্ছে। এতে বেশি লাভের আশায় ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ বিক্রিতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন ঔষধ ব্যবসায়ীরা।
সাধারণ মানুষও কোন ঔষধটি আসল ও কোনটি ভেজাল তা চিহ্নিত করতে অপারগ। এর ফলে এ ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধের বাণিজ্য দিন দিন জমজমাট হচ্ছে। আর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। উপজেলার অবৈধ ফার্মেসিগুলো সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের ভেজাল ঔষধ বেশি মূল্যে বিক্রি করছে, যা রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে উল্টো নানা উপসর্গের সৃষ্টি করছে।
এ ছাড়া অসচেতন রোগীদের চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে উল্লিখিত ঔষধের একই গ্রুপের নিম্নমানের ঔষধ সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সভাপতি ডা. মিজান মল্লিক ও গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির সভাপতি ডঃ মিজানুর রহমান এবিষয়ে জানান, ড্রাগ লাইন্সেন ও ফার্মাস্টিস সনদ ছাড়া কোন ঔষধের দোকান বা ফার্মেসী ব্যবসা করা যাবে না। লাইন্সেন বিহীন সকল ফার্মেসীগুলোতে দ্রুত আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।