নিজস্ব প্রতিবেদক:- বাকেরগঞ্জের ১৪ ইউনিয়নে ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ছিল ৩৮টি। এখন যার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮টি। এর মধ্যে ২০২২/২৩ অর্থবছরে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে ৪টি। রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে আরও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
সরেজমিন কথা হয় নিয়ামতি ইউনিয়নের মহেশপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্তব্যরত সিএইচসিপি মো. ফয়সাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এখনো কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় চলছে। ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারীর বেতন হয় রাজস্ব খাত থেকে, কিন্তু সিএইচসিপির বেতন হয় প্রকল্প থেকে। এ নিয়ে সিএইচসিপিরা অনেকবার আন্দোলন করেও সুফল পাননি।
গ্রামীণ জনগণের অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসাসেবা বিতরণে প্রথম স্তর কমিউনিটি ক্লিনিক। তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুসারে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। এখানে কর্মরত কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডার, স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন।
ক্লিনিকে আগত সেবা গ্রহণকারীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্যানিটেশন, সুষম খাদ্যাভ্যাস, টিকার সাহায্যে রোগ প্রতিরোধ, কৃমি প্রতিরোধ, বুকের দুধের সুফল, ডায়রিয়া প্রতিরোধ এবং পুষ্টি সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো।
কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বিনামূল্যে প্রায় ২৯ ধরনের ওষুধের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা এবং পুষ্টি সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের প্রসবপূর্ব (প্রতিরোধ টিকা দানসহ), প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর সেবা। এছাড়া সাধারণ জখম, জ্বর, ব্যথা, কাটা, পোড়া, দংশন, বিষক্রিয়া, হাঁপানি, চর্মরোগ, কৃমি এবং চোখ, দাঁত ও কানের সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। সময়মতো প্রতিষেধক টিকা; যেমন যক্ষা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কফ, পোলিও, ধনুষ্টঙ্কার, হাম, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়া ইত্যাদিসহ কমিউনিটি ক্লিনিকে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবাও দেওয়া হয়।
কমিউনিটি ক্লিনিকে শুক্রবার ব্যতীত সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত সিএইচসিপি এবং সপ্তাহে ৩ দিন স্বাস্থ্যকর্মী এবং পরিবার কল্যাণ সহকারীরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। কে কোনোদিন বসবেন, তা স্থানীয়ভাবে ঠিক করা হয়। অফিস সময় কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডাররা স্বাস্থ্য সহকারীদের তদারকি করেন।
এই উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিকে রয়েছে নানাবিধ সমস্যাও। ১৯৯৮ সালে নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ও জারাজীর্ন ভবন রয়েছে ১২টি। এছাড়াও মধ্যম ও জারাজীর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ১৫টি। এসব ক্লিনিকে বর্ষা মৌসুমে ছাদের ফাটল থেকে ক্লিনিকের ভিতরে বৃষ্টির পানি ঢুকে চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ ও কর্মরত চিকিৎসকরা।
ভরপাশা ইউনিয়নের আতাকাঠী কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলে দেখা যায়, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে রড বের হয়ে আছে। মূল ভবনের চারদিকে বড়বড় ফাটল। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ক্লিনিকের সিএইচসিপি মো. মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে বসে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ বড় ধরনের দুর্ঘটনা হওয়ার আগে ভবনটি যেন পুনর্নির্মাণ করা হয়।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে জানা যায়, তিন মাস অন্তর সরকারিভাবে ২৯ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয় প্রতিটি ক্লিনিকে। উপজেলার প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীর সংখ্যা সমান নয় কিন্তু ওষুধ সমান। কোথাও মাসে ৫০০/৭০০ রোগী আসে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শঙ্কর প্রসাধ অধিকারী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর আগে গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবায় ‘হাতুড়ে’ ডাক্তারদের ওপর নির্ভর করতে হতো। বর্তমান সরকার চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যাপক ভূমিকা নেওয়ায় চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। এ উপজেলায় যেসব ক্লিনিক জারাজীর্ণ হয়ে গেছে সেগুলো পুনর্নির্মাণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
News Editor
Leave a Reply