খান মেহেদী :- রাজধানীর ফলের বাজারে একমাস ধরে দামের উত্তাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি সব ফলই ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের জন্য ফল খাওয়া এখন স্বপ্নের বিষয়। যে কোনো ধরনের ফল কিনতে গেলে দামের উত্তাপে ত্রাহি অবস্থা ক্রেতাদের। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে ফলের দাম। ফলে চাহিদামতো ফল খেতে পারছেন না অনেকেই।
রোববার কারওয়ান বাজারে আকার ও মানভেদে প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। আনার ৩০০ থেকে ৪২০, সবুজ আপেল ৪২০,গালা আপেল ২৫০ থেকে ৩২০,ফুজি আপেল ৩০০, কমলা ২৮০ থেকে ৩০০, নাশপাতি ৩০০ থেকে ৩৩০, লাল আঙুর ৪০০ থেকে ৪৫০, ড্রাগন ফল ৩০০ থেকে ৩৫০,রম্বুটান ১০০০ ও কিউই ফল বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকা কেজি দরে।
দেশি ফলের মধ্যে আকার ও মানভেদে প্রতি কেজি কালো তরমুজ ৭০ টাকা, সবুজ তরমুজ ৫০ থেকে ৬০, পেঁপে ১০০ থেকে ১২০, আম্রপালি ২০০ থেকে ২৮০, বারি-৪ আম ২৮০, গৌড়মতি আম ২০০; ঝিনুক আম ১২০; সুরমা ফজলি ১৩০; আমড়া ৭০ থেকে ৮০; আমলকী ১০০; পেয়ারা ৮০; দেশি মাল্টা ৮০; লটকন ১৫০; আতা ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি পিস আনারস ৩০ থেকে ৬০ টাকা, জাম্বুরা ৬০ থেকে ১৫০; বেল ৫০; তাল ৪০ থেকে ৫০; কাঁঠাল ৩০০ থেকে ৭০০; প্রতি ডজন সাগর কলা ১০০; বাংলা কলা ৯০; সবরি কলা ১২০; চিনি চম্পা কলা ৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, গত এক মাসের মধ্যে বিদেশি ফলের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কারণ অনুসন্ধানে জানা গেল, ফল আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ এবং অফ সিজন হওয়ার কারণে দাম কিছুটা বেশি।
বংশালের রহিমা ফ্রুটসের বিক্রেতা মো. কিবরিয়া বলেন, `ফল আমদানিতে এখন খরচ অনেক বেশি। তাই ফলের দামও বেশি। এখন বিদেশি ফলের আমদানি ও সরবরাহ কম। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আপেলের মতো বিদেশি ফল তেমন আসে না। ফেব্রম্নয়ারি পর থেকে আবার আপেল আসা শুরু হলে দাম কমবে।`
গুলিস্তানের আল্লাহর দান ফল বিতানের বিক্রেতা গোলাম মাওলা বলেন, `গত মাসে আমদানিকারকদের কাছ থেকে ১৮ কেজির এক ক্যারট সবুজ আপেল কিনেছি ৪ হাজার ৫০০ টাকায়। বৃহস্পতিবার সেই একই ক্যারট কিনতে হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ টাকায়। তাহলে আমরা কম দামে কীভাবে বিক্রি করব।`
ফলের বাজারে এখন মাল্টার চাহিদা বেশি। অথচ এই ফলের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। সাড়ে ১৪ কেজির এক পেটি মাল্টা এক সপ্তাহ আগেও ৩ হাজার ২০০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন তার দাম ৪ হাজার ৫০০ টাকা।
এদিকে দাম বেড়েছে খেজুর এবং বাদামেরও। বর্তমানে প্রতি কেজি ইরানি মরিয়ম খেজুর ৯০০ টাকা, কালমি মরিয়ম ১০০০; সৌদি মাবরুম ১২০০; মেডজুল ১৫০০; আজোয়া ১০০০; দাবাস ৫০০; বড়ই খেজুর ৪৫০; জিহাদি খেজুর ২৫০ ও খুরমা খেজুর ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ভাজা বাদাম ২৮০; মিক্স বাদাম ৬৫০,আখরোট বাদাম ১০০০ থেকে ১২০০; কাঠ বাদাম ৯০০; ভাজা কাজু বাদাম ১৫০০, কাজু বাদাম ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, বাজেটে নতুন করে খেজুরের ওপর ট্যাক্স বসানোয় দাম বাড়ছে। ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন রোগে রোগীদের বাড়তি পুষ্টির জন্য ফল খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আকাশছোঁয়া দামের কারণে তারা সেটি পারছেন না। সাধারণ ক্রেতাদের মতে, বিদেশি ফল তাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে। দেশি ফল কিনতেও খুব একটা স্বস্তি পাচ্ছেন না।
রিফাতুল ইসলাম নামে বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, অন্যান্য পণ্যের মতো ফলও আমাদের ক্রয়সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। পরিবারের পুষ্টির কথা চিন্তা করে মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে কিনতে হচ্ছে। অনেকদিন পর হাফ কেজি আঙুর কিনেছি। শুধু বিদেশি বা দেশি ফল নয়, বাজারে সব জিনিসের দামই বেশি। দামের কোনোটিতেই হাত দেওয়া যায় না। অথচ আমাদের বেতন আগের মতোই আছে।
দিন আনেন, দিন খান ফারুক। ছোট ছেলে অসুস্থ; তাকে ডাক্তার দেখিয়েছেন। চিকিৎসক বলেছেন ছেলেকে বেশি বেশি ভিটামিন-সি যুক্ত ফল খাওয়াতে। কারওয়ান বাজারে তিনি ফল কিনতে এসে যে দাম শুনেছেন, চার-পাঁচদিন কাজ করেও সেটির জোগান দিতে পারবেন না। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে বাসি ফল কিনেছেন। ৪০ টাকায় জাম্বুরা কিনেছেন, তার অর্ধেকে প্রায় পচন ধরেছে। গায়ে দাগওয়ালা নরম মাল্টা নিয়েছেন হাফ কেজি ১২০ টাকায়। দেশি মাল্টা অবশ্য নিয়েছেন এক কেজি।
বাশারুল হাসান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বাচ্চাদের পুষ্টির জন্য ফল অনেক দরকারি একটি পণ্য। এ বাজারে যেন আগুন জ্বলছে। যে ফলেই হাত দিই- কয়েকবার চিন্তা করতে হয় কিনবো কি কিনবো কিনা। এক কেজি আপেলের দাম চাইছে ৩৫০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, ‘দাম কম হবে না। নিলে নেন, না নিলে হাত দেবেন না। ’ এত দাম দিয়ে ফল খাওয়ার সামর্থ্য কয়জনের আছে? দেশি ফলের দাম তুলনামূলক কম হলেও সেটাও অস্বাভাবিক।
News Editor
Leave a Reply