গত বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার সময় রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে দেখা হয় ৮৫ বছরের বৃদ্ধ ভিক্ষুক নিজাম শিকদারের সঙ্গে। গ্রামীণ মাটির রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত কাদামাটির মধ্যে কাঁধে ভিক্ষার ঝুঁলি নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি দু’মুঠো চালের জন্য ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। জীবনের শেষ প্রান্তে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন ভিক্ষুক নিজাম।
তখন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় থর থর করে দেহ কাঁপতে থাকা নিজাম করুণ সুরে বলেন, বাবা মোড় কেউ নেই! ঘর দুয়ার হারিয়েছি অনেক আগেই। বাকেরগঞ্জ সাহেবগঞ্জ ৫ নং ওয়ার্ডে একটি ভাড়া বাসায় মোড় অসুস্থ স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে ঐহানে থাকি। তাই এহন জীবন বাঁচানোর লইগ্যা সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে আর রোদে মধ্যে ঘুরতাছি মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। সন্ধ্যার পর হলে হাটবাজারে দোকানে দোকানে পাঁচ-দশ টাকার জন্য মানুষের কাছে হাত পাতি। মাস গেলেই ১৫০০ টাকা ঘর ভাড়া দিতে হয়। স্ত্রী নিলুফা অসুস্থ তার ঔষধের টাকাও ভিক্ষা করেই যোগাড় করতে হয়। এখন শ্বাসকষ্টের রোগে আক্রান্ত হয়েছি। বাবা জীবনডা আর চলে না। গরিবের কষ্ট কেউ দেহে না। তার সেই কথাই যেন সত্যি হল গত ১৪ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার কষ্ট আর কেউ দেখল না। এখন তার স্ত্রী ও দুই সন্তান দু’মুঠো ভাতের জন্য অন্যের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে।
মৃত্যু নিজাম শিকদারের স্ত্রী নিলুফা বেগম জানান, আমরা পৌরসভার বাসিন্দা আমার স্বামী পৌরসভার ভোটার ছিলেন। আমিও পৌরসভার ভোটার। সরকারি কোন সহায়তা আমরা কখনো পাইনি। আমরা এখানে ভাড়া বাসায় বসবাস করি। আমার ছেলে আব্দুল্লা ১২ বছর বয়স মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছে। মেয়ে মারজিয়া মডেল স্কুলের ছাত্রি। এখন ওদের তিন বেলা ভাত দেয়াই আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ওদেরকে লেখাপড়া করানো আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ওর বাবার ভিক্ষায় আমাদের সংসার চলত। দুই মাসের বাসা ভাড়া বকেয়া রয়েছে তাও দিতে পারিনি। সরকার গরিবের জন্য ঘর দেয়, শুনছি সরকার নাকি কার্ডের চাউল দেয় কোন জনপ্রতিনিধি একটা চাউলের কার্ড আমাগো দিল না। আল্লাহ্ মোগো কোনো মতে বাঁচায়ে রাখছে। খুব কষ্ট হয় ছেলে মেয়েদের মুখের দিক তাকালে। এখন আমি নিজেই ভিক্ষা করি। কান্না জড়িত কন্ঠে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সহায়তা কামনা করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজল চন্দ্র শীল জনকণ্ঠকে বলেন, আপনাদের মাধ্যমেই আমি এরকম একটি সংবাদ পেয়েছি। অবশ্যই এই ভিক্ষুক পরিবারটির খোঁজখবর নিয়ে তাদের সহায়তা করা হবে।
Leave a Reply