1. [email protected] : admins :
  2. [email protected] : Nayeem Sajal : Nayeem Sajal
  3. [email protected] : News Editir : News Editir
বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৩৩ অপরাহ্ন

কানাডা’র মন্ট্রিয়লে এখন অপসংস্কৃতির চর্চা হয়!

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

কানাডা’র মন্ট্রিয়লে এখন অপসংস্কৃতির চর্চা হয়!

স্টার আনন্দ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দুরে আটলান্টিক প্যাসিফিক এন্টার্টিক মহাসাগর ঘেরা দেশ কানাডার মন্ট্রিয়লে রয়েছে এক বিশাল বাংলাদেশী কমিউনিটি। এটা যেনো মন্ট্রিয়লের বুকে এক টুকরো বাংলাদেশ। এক সময় মন্ট্রিয়লে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বাঙালী সংস্কৃতি এবং বাঙালী কৃষ্টির সঠিক ধারন ও বাহন করা হতো। বাংলাদেশের গুণী সঙ্গীতশিল্পীরা মন্ট্রিয়লে এসে মঞ্চ মাতিয়ে দর্শকের মন জয় করেছেন। তারা এখানে এসে সন্মান – সন্মানী উভয়ই পেয়েছেন।সেই সময় এখনকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিল্পীরা সমান ভাবে মঞ্চে গান গেয়েছেন তাদের নিজ নিজ যোগ্যতায়।

কিন্তু অত্যন্ত হতাশা আর লজ্জাজনক বিষয় হলো কয়েক বছর ধরে মন্ট্রিয়লের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে হঠাৎই যেনো দুষিত হাওয়া গ্রাস করেছে। এখনকার বাংলাদেশ কমিউনিটির সাংস্কৃতিক অঙ্গন এতোটাই হিংসাত্বক যে, কেউ কারো সামান্য উন্নতি কিম্বা প্রশংসা সহ্য করতে পারছে না। কারও সাথে কারও মতের অমিল হলো কিম্বা কারও সাথে কারও দ্বন্দ্ব হলো বা কারও চেহারা পছন্দ হলো না, তখন সাথে সাথেই আরেকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন সৃষ্টি হয়ে যায়। তাই তো মন্ট্রিয়লে এখন ব্যাঙের ছাতার মতো সংগঠনের তৈরি হয়েছে। দর্শক আর দক্ষ সংগঠকের চেয়ে এখন সংগঠনের সংখ্যাই বেশী। সংগঠকদের মনোভাব এমনই যে, আমার চেয়ে বড় কে ? আর সেখান থেকেই শুরু হয়েছে অপসংস্কৃতি। কীভাবে ? সেটাই বিশ্লেষন করেছেন কানাডা’র মন্ট্রিয়ল প্রবাসী চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষার্থী জান্নাত ইসলাম তুষ্টি।

এখন আর গুণী বা যোগ্য শিল্পীরা মঞ্চে সম্মান পান না, অনুষ্ঠান পরিচালনাও করেন না। এখনকার সংস্কৃতিমনা যোগ্য ব্যক্তিরাও সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন না। কেউ কেউ আবার অযোগ্যদের আস্ফালনের কারণে নিজের সম্মান বাঁচানোর জন্যে দূরে দূরে থাকছেন। এখন সংস্কৃতি চর্চা পরিণত হয়েছে ব্যবসা আর পারস্পরিক আদান প্রদানের মাধ্যম হিসেবে। এই অপসংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে অযোগ্য ব্যক্তির হাতে সংগঠনের দায়িত্ব থাকায়। দল ভারী করার জন্য এরা এখন অপসংস্কৃতির ধারক বাহকদের কাজ করার সুযোগ দেয়। সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান নেই, হারমনিয়ামের কড ধরতে পারে না, না বুঝে সুর না বুঝে লয়, না বুঝে তাল – এমন সব অখাদ্য শিল্পী দাপটের সাথে মঞ্চে উঠে। তারা ভাবখানা এমন দেখায় যেনো তাদের চেয়ে বড় শিল্পী নর্থ আমেরিকাতে নেই।

আবার সংস্কৃতি চর্চার নামে হচ্ছে এক অসুস্থ লীলা খেলার প্রতিযোগিতা। টাকা দিয়ে সন্মান কেনার জন্য উদগ্রীব হয়েছে ব্যক্তিত্বহীন ব্যবসায়ীরা। এদের কাছে টাকা দিয়ে পদ কিনে চেয়ারম্যান হয়ে আলগা সম্মান অর্জন করাই যেনো মূখ্য বিষয়। কিন্তু ব্যক্তিত্বহীন ব্যবসায়ী বুঝতে অক্ষম যে টাকা দিয়ে সন্মান কেনা যায় না, টাকা দিয়ে ব্যক্তিত্ব কেনা যায় না। সংস্কৃতি চর্চা করতে হয়, সাধনা করতে হয়। বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গীত, নৃত্য, নাট্যকলা প্রতিটি বিষয়ে চর্চা/ সাধনা করার মধ্য দিয়েই একজন শিল্পী তার শৈল্পিক প্রতিভার প্রতিফলন প্রদর্শন করতে পারেন।

মন্ট্রিয়লে ফোবানার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় একজন লোকশিল্পীকে আমন্ত্রণ করে এনে অসম্মান করেছে ফোবানা ফোবানা কর্তৃপক্ষ। ওই শিল্পী দেশের একজন গুণী শিল্পী, গুণী মানুষ। তিনি বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির লোকসঙ্গীত শিল্পী। তিনি বাংলাদেশের অহংকার। তার কন্ঠে এমনই যাদু এমনই দরদ, মায়া মমতা গভীরতা যে, তার কন্ঠের যাদুতে শ্রোতারা সন্মোহিত হন। তিনি শিশু একাডেমীর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। লোক সঙ্গীত নিয়ে গবেষণা করছেন। সেই সাথে বিটিভিসহ দেশের প্রায় সব টিভি চ্যানেলে লোকসঙ্গীত পরিবেশন করছেন। প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী কনক চাঁপাও এবার মন্ট্রিয়লের একটি অনুষ্ঠানে তার গান শুনে মঞ্চে উঠে তার প্রশংসা করেছেন।

এমন একজন গুণী শিল্পীকে আমন্ত্রণ করে এনে মঞ্চে উঠার সুযোগ না দিয়ে অসম্মান করলেন পনেরো হাজার ডলার দিয়ে ফোবানা’র চেয়ারম্যান হওয়া লোকটি। অথচ ফোবানার পোস্টারে ওই শিল্পীর ছবি দিয়ে প্রচার করা হয়েছিল যে, তিনি অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। মন্ট্রিয়লের অনেক সন্মানিত ব্যক্তিবর্গ তার গান শোনার জন্য অনুষ্ঠানে গিয়ে আশাহত হয়েছেন। এই অযোগ্য চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত আক্রোশ এবং হিংসার কারনেই ওই শিল্পীকে সম্মান জানানো যায়নি। অথচ ফোবানা’র মঞ্চে ফ্যাশন শো এর নামে মধ্যবয়স্ক মহিলাদের অপসংস্কৃতি প্রদর্শিত হয়েছে। অখাদ্য আর অখ্যাত শিল্পীদের গান গাওয়ার সুযোগ করে দিতে অন্য আরেকজন প্রখ্যাত শিল্পীর গান গাওয়ার সময় মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাকার জোরে চেয়ারম্যান হওয়া ব্যক্তিটির নির্দেশেই এমন অপকর্ম হয়েছে। গানের বদলে বার বার ফ্যাশন শোর নামে অপসংস্কৃতির এই অরুচিকর শো দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর এতে দর্শকরাও চরম বিরক্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এখন মন্ট্রিয়লে যে সকল সংগঠক সংস্কৃতি চর্চা করেন, এদের বেশীরভাগ সংগঠনের কর্তারাই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নয়। ফলে নিজের স্বার্থসিদ্ধি লাভের আশায় এমন কিছু মহিলাকে মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়, যাদের এসব মঞ্চে উঠারই কোন যোগ্যতা নেই। মন্ট্রিয়লের বয়স্ক কিছু নারী – পুরুষ আছে, ঘুরেফিরে তাদেরকেই সব অনুষ্ঠানের মঞ্চে দেখা যায়। নতুনদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ দেওয়া হয় না, কারন সেই সংগঠকের একনায়কত্ব এবং সংগঠন কর্তাকে খুশি করতে না পারা।

এসব বিষয়ের বাইরেও কিছু ঘটনা ঘটে যায়। নিজ প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে কেউ যদি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বড় কোন ভুমিকা রাখে, তখন তাকে আকাশ থেকে ধপাস করে মাটিতে ফেলার ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যায়। এই অসুস্থ পরিবেশে সুষ্ঠ সংস্কৃতি চর্চার অন্তরায় ওই সকল সংগঠন এবং বয়স্ক অখাদ্য শিল্পীরাই। তাই সবাইকে মনে রাখতে হবে – সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা তখনই সম্ভব হবে, যখন সত্যিকার কোনো সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সংগঠনের কর্তা হবেন, গুণীজনদের সন্মান দেওয়া হবে, নতুন শিল্পীদের মঞ্চে উঠার সুযোগ দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে হিংসা এবং ব্যক্তিগত চাহিদা বাদ দিতে হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 Somoyexpress.News
Theme Customized By BreakingNews