ইচ্ছে ছিল সেই ভয়ংকর ৭ দিনের এক একটা মূহুর্ত নিয়ে একটি উপন্যাস লেখার। বা লাইভে আসার,কোন
সাক্ষাৎকার দেয়ার। কিন্তু আমি এখন একজন হক্কানী আল্লাহর ওয়ালির ছাত্র! উস্তাদ বললেন “থাক না কিছু বিষয় আখিরাতের সাওয়াবের জন্য”। যার যা ইচ্ছে ভাবুক, যা ইচ্ছে অপপ্রচার করুক, যা ইচ্ছে বলুক, দিক না শত অপবাদ!
তবে আপনাদের কথা দিয়েছিলাম একদিন সত্যটা নিজের মুখে জানাব। শুধু এজন্যই দুলাইন লিখছি: উপন্যাস হবে হয়তো অন্য কোন ভুবনে! যদি লিখতে পারতাম প্রতি পৃষ্ঠায় কান্না জমা থাকত। আমি গুছিয়ে লিখতে পারি না। বলতে পারি।
হ্যাঁ আমাকে গুম করা হয়েছিল। মিরপুর থেকে। ঠিক আমার স্ত্রীর মাদ্রাসার সামনে থেকে। সে রান্না করে ফ্রেশ হয়ে খুব সেজেগুজে অপেক্ষায় ছিল। বহুদিন পর আমি সফর থেকে ফিরব। দুজনে একসাথে খাব। নতুন বিয়ে। ঘন্টাখানেক আগে কল দিয়ে বলেছিলাম সাথে
৩ জন মেহমান আছে খিচুড়ি করো। আহলাদি সে। তাই যেখানেই যাই গুগল লোকেশান শেয়ার করি। আজও করলাম। কে জানতো পরবর্তীতে এই একটি কাজই দুনিয়া কাঁপিয়ে দেবে!
খিচুড়ি আর খাওয়া হলোনা। হলোনা পবিত্র আলিংগন বা সাক্ষাৎটুকুও। ঠিক তার দরজায় গাড়ি দাঁড়াতেই মূহুর্তেই ২ টি বড় গাড়ি ঘিরে ফেলল। সম্ভবত কালো রংগের। ফোন আমার হাতেই ছিল। শুধু বলব গেইট টা খুলো। হলোনা। দুই মিনিটের মাঝেই সবাই গাড়িতে। চোখে কাল কাপড়। ফোন কেড়ে নেয়া হল। মুখে মাস্ক।
হাতে হ্যান্ডকাপ! নিয়ম অনুযায়ী প্যানিক রিলিজ করার জন্য একের পর এক হিন্দি গান ছেড়ে দেয়া হল!
তেরে বিন আব না লেংগে একভি দাম!
তুঝে কিতনা চাহেইন অওর হাম!
তেরে সাথ হো জায়েংগে খাতাম!
তুঝে কিতনা চাহেইন অওর হাম!
চোখ দিয়ে কয়েকফোঁটা পানি পড়ছিল। বুকে ঝড়! ভাবছিলাম একটা বার “ভালবাসি” বলাও হলো না!
বিয়ের দিনও আমি সফরে ছিলাম। আর দশজন কাপলের মত বাসর করা হয়নি! আমার আহলিয়া দরজায় দাঁড়িয়ে! যেন মূহুর্তেই শুন্যে মিলিয়ে গেল
তার সাঁজ! তার রঙ! মেহেদি রাঙা হাত।
চোখের পানি শুকিয়ে গেল! কালিমা শাহাদাত পড়তে থাকলাম। পড়তেই থাকলাম। ধরেই নিয়েছিলাম হয়তো ক্রসফায়ার দিবে। আমি শহীদ হতে যাচ্ছি? সত্যিই কি আর দেখা হবে না এই দুনিয়া?
এ এক অবর্ণনীয় অনুভূতি!
এ এক খুবাইবের অনুভূতি!
রাদিয়াল্লাহু আনহু।
খুবাইবের সেই কবিতাও মনে পড়ছিল!
আমরাও মুখস্থ রাখতে পারি।
وَلَسْتُ أُبَالِي حِينَ أُقْتَلُ مُسْلِمًا
عَلَى أَىِّ شِقٍّ كَانَ لِلَّهِ مَصْرَعِي
وَذَلِكَ فِي ذَاتِ الإِلَهِ وَإِنْ يَشَأْ
يُبَارِكْ عَلَى أَوْصَالِ شِلْوٍ مُمَزَّعِ
’’যখন আমি মুসলিম হিসাবে শহীদ হচ্ছি তখন আমি কোনরূপ ভয় করি না। আল্লাহর উদ্দেশ্যে আমাকে যেখানেই মাটিতে লুটিয়ে ফেলা হোক না কেন, (তাতে আমার কিছু যায় আসে না)। আমার এ মৃত্যু আল্লাহ তা’আলার জন্যই হচ্ছে। তিনি যদি ইচ্ছা করেন, তবে আমার দেহের প্রতিটি খন্ডিত জোড়াসমূহে বরকত সৃষ্টি করে দিবেন।’’
এগুলো গল্প নয়। সত্যিই মহাকাব্য! কতটুকুই বা লিখা যায়? এত্ত ট্র্যাজেডি! আমার রবের মহান পরিকল্পনা! গাড়ি চলল। বুঝলাম টাইমকিল করছে। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে যাচ্ছে আয়নাঘরের দিকে! আয়নাঘর! এক বিভৎস জগৎ! ঢাকার জাহান্নাম! মানুষের বানানো “জাহীম”!
To Be Continued…….
Abu Taw Haa Muhammad Adnan
সফর ২, ১৪৪৬ হিজরি।
নাঈম সজল
সময় এক্সপ্রেস নিউজের সম্পাদক ও প্রকাশক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
Leave a Reply