নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের কৃষকেরা যে বাঁধাকপি গড়ে সাড়ে ১৩ টাকা দরে বিক্রি করেন, সেই বাঁধাকপিটি ঢাকায় এসে খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৩৮ টাকায়। এই দর কৃষক পর্যায়ে বিক্রি হওয়া দামের প্রায় তিন গুণ।
শুধু বাঁধাকপি নয়, এভাবে বেগুন, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও কাঁচা মরিচ কৃষক পর্যায়ের দামের দুই থেকে তিন গুণ দরে বিক্রি হয় ঢাকার বাজারে। এর কারণ মধ্যস্বত্বভোগী, পরিবহন খরচ ও পুলিশের চাঁদাবাজি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের করা এক প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। গত ১ থেকে ৩ জানুয়ারি ঢাকার কারওয়ান বাজার, বগুড়া, যশোর, রাজশাহী ও মেহেরপুর জেলার কৃষক, ফড়িয়া, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এটি গত সপ্তাহে কৃষি মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়।
সবজির বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে বহু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এবার তা সরকারি সংস্থার প্রতিবেদনেই উঠে এল।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আ. গাফ্ফার খান বলেন, ‘কৃষক পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যায়ে যেতে কীভাবে কৃষিপণ্যের দাম বাড়ে, তা অনুসন্ধানের জন্য আমরা গবেষণাটি করেছি।’
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাঁচটি সবজি বিক্রি করে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেন কৃষকেরা, হার সবজিভেদে ৩৭ থেকে ৪৭ শতাংশ। আর ফড়িয়ারা ৬ থেকে ৭, পাইকাররা ১১ থেকে ২১ ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ৩৩ থেকে ৪৬ শতাংশ মুনাফা করেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পণ্য পরিবহনে ট্রাকভাড়া, সংরক্ষণ ব্যয়, দোকানভাড়া ও নামানো-ওঠানোর কাজে শ্রমিকের মজুরি খরচ রয়েছে। পণ্য পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সময় বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসায়ীদের চাঁদা দিতে হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা রাজশাহী ব্যবসায়ীদের তথ্যানুযায়ী, জেলাটির বানেশ্বর বাজার থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজার পর্যন্ত পণ্য পরিবহনে ট্রাকভাড়া ১৭ হাজার টাকা। তবে রাজশাহীর আমচত্বর, বেলপুকুরিয়া, নাটোর বাইপাস, এলেঙ্গা বাইপাস, টাঙ্গাইল বাইপাস, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় দেড় হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। যশোর থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ট্রাকভাড়া ২৪ হাজার টাকা। এই পথেও কয়েক জায়গায় চাঁদা দিতে হয়।
প্রতিবেদনে ‘রাস্তা খরচ’ খাতে পুলিশের চাঁদার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে গত রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সাড়া পাওয়া যায়নি।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে কৃষিপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সাতটি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে পাইকারি বাজারে তদারকি বাড়ানো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বাজার কমিটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং পরিবহন ব্যয় কমানোর বিষয়গুলো রয়েছে।