সময় এক্সপ্রেস নিউজ ডেস্ক : যদিও বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে এতটা শোনা যায় না, তবে “দুধ এবং আনারস একসাথে বা পরপর খেলে বিষক্রিয়া হয়ে মারা যায়” – ছোটবেলা থেকে এই কথাটি শুনে আসেনি এরকম মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে একেবারে নেই বললেই চলে। এই ভয়ে অনেকে যেদিন দুধ বা দুগ্ধজাত কিছু খান, সেদিন ভুলেও আনারস মুখে তোলেন না। এই তথ্যের সত্যতা যাচাই এবং বিস্তারিত জানতে সময় এক্সপ্রেস নিউজ টিম অনুসন্ধানে নামে। আসুন দেখে নেয়া যাক অনুসন্ধানে কি পেলাম আমরা।
দুধকে বলা হয় আদর্শ খাবার। বিশেষজ্ঞদের মতে, দুধই একমাত্র তরলজাতীয় খাবার, যেখানে প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। প্রোটিন, ফ্যাট আর কার্বোহাইড্রেটের দারুণ এক ‘মিক্সচার’ হলো দুধ। তাই যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য দুধ উপকারী।
দুধের পুষ্টিগুণাগুণ সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন এখানে।
অন্যদিকে আনারসে ভরপুর ভিটামিন সি। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাসের দারুণ এক উৎস। দেশেই প্রচুর চাষ হয় বলে গ্রাম থেকে শহর—সব জায়গায়ই আনারস সহজলভ্য।
দুধের পুষ্টিগুণাগুণ সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুন এখানে।
আবার, দুধের অন্যতম উপাদান হল ক্যাসিন (Casein) । দুধের সাথে যখন কোন অ্যাসিডিক পদার্থ মেশানো হয়, যেমন লেবু, আনারস, বা টক জাতীয় অন্য কোন ফল বা খাবার, তখন তা দুধকে ভেঙ্গে ক্যাসিন আলাদা করে ফেলে এবং দুধ পরিণত হয় ছানায়।
এমনকি মানবদেহে পাকস্থলীর মাঝেও এক বিশেষ প্রকার গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড থাকে যা হজমে সহায়তা করে। দুধ পান করলে পাকস্থলীতে পৌঁছানোমাত্রই সেটি ক্যাসিন আলাদা করে দুধকে ছানায় পরিণত করে। এটি একটি স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়া, যা ছোটবড় সকলেরই হয়ে থাকে।
দুধের মধ্যে আনারস মেশালে উপরে বর্ণিত কারণে দুধ জমাট বেধে ছানায় পরিণত হবে। যা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং আনারস ছাড়া অন্য যেকোনো টক জাতীয় খাবারের জন্যও প্রযোজ্য।
দুধ ও আনারস একসঙ্গে পাকস্থলিতে গেলে কি হয়?
দেশের বহুল প্রচারিত গণমাধ্যম প্রথম আলোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বারডেমের সাবেক প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো বলেন, ‘দুধ আর আনারস একসঙ্গে খেলে মানুষের মৃত্যু হয়—কথাটির বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। এটি নিতান্তই প্রচলিত কুসংস্কার।’
যুক্তি হিসেবে তিনি কাস্টার্ডের কথা বললেন। এতে অন্যান্য ফলের সঙ্গে আনারস তো থাকেই, সঙ্গে থাকে দুধ। আবার আইসক্রিম কিংবা মিল্কশেকেও আনারসের সঙ্গে দুধ ব্যবহার করা হয় অহরহ। এসব খাবার খেলে মৃত্যু তো দূরে থাক, ছোটখাটো সমস্যার অভিযোগও কেউ করেছেন বলে শোনা যায় না।
বলে রাখা দরকার, আনারস কিংবা দুধে কারো কারো এলার্জী থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে আনারস গ্রহণে কিংবা দুধ পানে বিরূপ শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এই জন্যই আলসার বা গ্যাস্ট্রিক বা ‘ল্যাক্টোজেন টলারেন্স’ কম এমন রোগীদেরকে দুধ পান করতে কিংবা বেশি পরিমাণে টক জাতীয় ফল খেতে নিরুৎসাহিত করা হয়। এই ধরণের পূর্ব শারীরিক অবস্থা না থাকলে, দুধ ও আনারস একসাথে খেলে আলাদা করে কোন স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। উল্লেখ্য বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আনারস ও দুধের তৈরি জনপ্রিয় বিভিন্ন পানীয় রয়েছে, যার মধ্যে ভাইফালা, বাবল টি পাইন্যাপল স্মুদিস, ওটাই, মিল্কশেক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মৃত্যুর ভুল ধারণাটি কীভাবে এল?
এ প্রশ্নের উত্তরে প্রথম আলোকে পুষ্টিবিদ
আখতারুন নাহার আলো জানান, এটি একটি প্রচলিত লোককাহিনী। আনারস সাধারণত ঝোপঝাড়ের মধ্যেই হয়। আর ঝোপ মানেই সাপের আনাগোনা। প্রচলিত আছে, একবার এক বিষধর সাপ আনারসের ঝোপে ঘাপটি মেরে ছিল। কোনোভাবে সেই সাপ আনারসের গায়ে বিষ ঢেলে দিয়েছিল। এরপর সেই বিষাক্ত আনারস খেয়ে ফেলেন এক ব্যক্তি। এর পরপরই চুমুক দেন দুধের গ্লাসে। ব্যস, খানিক পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। ফলে লোকজন ধরে নেয়, আনারসের পর দুধ পান করায় তিনি প্রাণ খুইয়েছেন এবং তারপর থেকেই ছড়িয়ে পড়ে সেই কুসংস্কার—আনারস আর দুধ একসঙ্গে খেয়েছেন তো মরেছেন!
উপরিক্ত আলোচনা ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দেখে আমরা নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আনারস আর দুধ একসাথে খেলে বিষক্রিয়া হয় বা মানুষ মারা যায় এই দাবীর কোন সত্যতা নেই।
তাই উক্ত দাবীকে অসত্য বলে বিবেচনা করছে টিম সময় এক্সপ্রেস নিউজ ।