মেহেরপুর প্রতিনিধি : মাজিদ আল মামুন
স্ত্রীর পরকীয়ার বলি আসাদুজ্জামান (৪২) নামের এক যুবক। আদালতের নির্দেশে দুই বছর পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন।
সোমবার (১৪ মার্চ), বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাহাদত হোসেন এর উপস্থিতিতে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নের চাঁন্দামারী কবরস্থান থেকে লাশ উত্তোলন করে ফরেনসিক পাঠায় পুলিশ। নিহত আসাদুজ্জামান চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার মোচাইনগর গ্রামের মৃত আব্দুল জলিল মাস্টারের ছেলে।
নিহত আসাদুজ্জামানের ভাই ও মামলার বাদী হাসানুজ্জামান লিটন জানান, ২০০৭ সালের ১৮ই নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাসপাতাল পাড়ার মহিবুল হকের মোনালিসা হক লোপার সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই আসাদুজ্জামান বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তিনি যশোর জেলার কনকর্ড ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে এমএম কলেজের পাশে বাড়িভাড়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করত। একই এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করত নরসিংদী জেলার বাখরনগর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে হুমায়ুন কবির (৩৫)। সেখানে বসবাস করা কালীন সময়ে তার ভাবি (মোনালিসা হক লোপা) সাথে হুমায়ুন কবিরের প্রেম সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লোপা ও হুমায়ুনের প্রেম সম্পর্ক বিষয়টি আসাদুজ্জামান জেনে ফেলায় পারিবারিকভাবে অশান্তির সৃষ্টি হলে চুয়াডাঙ্গা শহরে এসে বসবাস শুরু করে। চুয়াডাঙ্গায় গিয়ে আর্গন নামক একটি ফার্মাসিটিক্যাল সে চাকরি শুরু করে। পরবর্তীতে লোপার সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে হুমায়ুন। এর মধ্যেই লোপা গোল্ড জেএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি পাই। চাকরি পাওয়ার পর থেকে লোপা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আসাদুজ্জামান বারংবার লোপাকে নিষেধ করেও সে থামে নি। ২০২০ সালের ২৭ মার্চ রাতে আসাদুজ্জামান অসুস্থ হয়ে পড়েছে এই মর্মে বাড়ির লোকজন কে জানিয়ে বলে সে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। পরে ২৮ মার্চ মরদেহ এনে পার্শ্ববর্তী চাঁন্দামারী গ্রামের কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। ২০২১ সালের ১১ ই নভেম্বর তারিখে মোনালিসা হক লোপা ও হুমায়ুন কবির বিয়ে করে। বিয়ের পর লোপা ও হুমায়ুনের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। বিরোধের কারণ এই লোপার কিভাবে আসাদুজ্জামানকে হত্যা করেছে হুমায়ুন তার তথ্য উপাত্ত আসাদুজ্জামানের ছোট ভাই মাসুম বিল্লাহ কে মুঠোফোনে জানান। এ ঘটনায় ৩রা জানুয়ারি ২০২২ সালে চুয়াডাঙ্গা আমলি আদালতে মোনালিসা হক লোপা ও তার প্রেমিক হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
নিহত ছোট ভাই মাসুম বিল্লাহ জানান, আমার ভাইকে খিচুড়ির মধ্যে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে আমার ভাবী ও তার সহযোগীরা হত্যা করে। আমার ভাবিসহ হত্যাকারীরা প্রথমে পরিবারের লোকজনকে জানায় স্ট্রোক জনিত কারণে আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। হুমায়ুন কবির আমাকে মুঠোফোনে হত্যার বিবরণ তুলে ধরেন। ছাড়াও আমার ভাবী এবং হুমায়ুনের অশ্লীল ছবি ও ভিডিও আমাদের কাছে পাঠাতে থাকে। তখনই আমরা নিশ্চিত হই আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে সে স্ট্রোক করে মারা যায়নি। আমার ভাবী লোপা সহ ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচাই চেয়েছেন তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি সাঈদ হোসেন জানান, আদালতে মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত নির্দেশনা দেয়। নির্দেশনা পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ২৫ জানুয়ারি ২০২২ মামলা নথিভুক্ত করে। যার মামলা নং-২১,তাং-২৫.০১-২২ইং। মামলা রেকর্ড হওয়ার পর দিন হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করে ০৩ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রিমান্ড শেষে বর্তমানে হুমায়ুন কোভিদ চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে আছে। পলাতক রয়েছে এই মামলার প্রধান আসামি মোনালিসা হক লোপা। তাকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আদালতের নির্দেশনা পেয়ে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।