নিজস্ব প্রতিবেদক ঠাকুরগাঁও – ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা শামস নগর গ্রামে স্ত্রী লাইলি বেগমের কাছে ১৭ বছর পর ফিরে এলো নিখোঁজ হওয়া অ’ভিমানি স্বামী রফিকুল ইসলাম অরফে মজনু। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে ফিরেছেন তিনি। লাইলি বেগম জানান, ২০০১ সালে ১০ নভেম্বর রফিকুলের সাথে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে হয় তার। ২০০৫ সালে ৮ এপ্রিল ছোট্ট একটু মান অ’ভিমানে ঘর থেকে বেরিয়ে যান স্বামী। তারপর দীর্ঘ ১৭ বছর পর ঘরে ফিরেন তিনি।
লাইলি বলেন, বিয়ের এক বছর পরে আমা’র বড় মেয়ে রিয়া মনির জন্ম হয়। ওর বয়স এখন আঠারো বছর। ছোট মেয়ে রিনি ববি যখন আমা’র পেটে তখনই চলে যায় আমা’র স্বামী। সে সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা মোবাইলফোন সহ অন্যান্য সুবিধা না থাকায় অনেক খোঁজার পরেও স্বামীর কোন সন্ধান আমি পাইনি। ১৭ বছর ধরে কাঁদছি আমি। অন্য ঘর করিনি। হোটেলে মসলা বাটার কাজ করে অন্যের ভিটায় আশ্রিতা হিসেবে জীবন যাপন করছি। সন্তানদের লেখাপড়া শিখাচ্ছি।
স্বামী ফিরে আসার আনন্দ অশ্রু নিয়ে লাইলি বলেন, আমা’র বিশ্বা’স ছিলো একদিন সে সব মান ভেঙ্গে ফিরে আসবে। আজ আমি পৃথিবীর সেরা সুখী মানুষ। আমি আজ নিশ্চিন্ত৷ সন্তানরা তাদের বাবার মুখ দেখেছে। ছোট মেয়ে রিনি ববি বলেন, আমা’র বাবা কে আমি জানতাম না৷ মা’র কাছে কখনো শুনতাম বাবা হারিয়েগেছে কখনো বলতো মা’রা গেছে। এভাবে কে’টেছে ১৭ বছর। বাবার আদর স্নেহ ভালোবাসা পাইনি৷ আমি আমা’র বাবাকে আর হারাতে চাইনা। সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভুল করলেও আমরা তার পরিচয়ে বড় ‘হতে চাই। মায়ের রাতের চা’পা কান্না আর দেখতে চাইনা আমরা।
প্রতিবেশী হাসিনা বানু বলেন, অনেক ক’ষ্ট করে সন্তানদের লালন করেছে লাইলি। সন্তানদের মানুষ করেছে। ১৭ বছর পর তার স্বামী ফিরেছে ভালো লাগছে তাই দেখতে আসছি। আরেক প্রতিবেশী জুলেখা আক্তার বলেন, লাইলি খুব অভাগি৷ ভিটে বাড়ি নাই৷ হোটেলে কাজ করে সমাজে টিকে আছে৷ স্বামী থেকেও ১৭ বছর ধরে পরিত্য’ক্তা সে। বাকি জীবন লাইলিকে যেন আর ক’ষ্ট ছুতে না পারে এই প্র’ত্যাশা করি।
লাইলি বেগমের স্বামী রফিকুল ইসলাম বলেন, লাইলির একটা কথা আমাকে ক’ষ্ট দেয়। তাই ১৭ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। সন্তানদের কথা মনে পড়তো৷ কিছুদিন আগে এখানকার এক লোকের সাথে আমা’র দেখা হয়৷ তার থেকে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে স্ত্রী সন্তানদের দেখতে আসি। এ সময় তিনি সময় এক্সপ্রেস নিউজ কে বলেন, আমি লাইলির অনুমতি ছাড়ায় ঢাকায় বিয়ে করি। সেখানে দুই ছেলে সন্তান আছে আমা’র৷ সব মিলিয়ে আমি অনুত’প্ত ৷ তবে কবে কখন কোথায় দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন তা বলেননি রফিকুল ইসলাম।
স্থানীয় উপমা পল্লী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফারজানা আক্তার পাখি বলেন, লাইলি অ’পেক্ষা প্রমান করে একটা নারী ভেতর থেকে কতটা শক্তিশালী ‘হতে পারে৷ সমাজের নানা কটু দৃ’ষ্টি ভঙ্গি ও কটু কথার সাথে যু’দ্ধ করতে হয়েছে লাইলিকে৷ আমা’র চোখে লাইলি এক সংগ্রামী নারী। সে তার অনাগত আগামির প্রতিটা মুহুর্তে স্বামীর স্’বিকৃতি ও ভালোবাসা পাবে এই প্র’ত্যাশা করি৷ সেই সাথে লাইলির পাশে থাকবো আমরা।