1. [email protected] : admins :
  2. [email protected] : Nayeem Sajal : Nayeem Sajal
মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৫৩ অপরাহ্ন

ঘুষ দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৩৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:-

(তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও গড়ছেন অর্থের পাহাড়)

ছেলেকে পড়ান চীনের নামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনটি বিশাল ভবনসহ রয়েছে বিপুল বিত্ত। অথচ পেশায় তিনি একজন ইউপি সচিব। তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারী হয়ে কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন-প্রশ্ন সেটাই। শুধু সম্পদ নয়, প্রভাবেও কম যান না বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সৈয়দ শাহনেওয়াজ। অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করায় আন্দোলন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে।

শাহনেওয়াজ অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, অনেকের অনৈতিক দাবি পূরণ করতে না পারায় মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার ভরপাশা ইউনিয়নের খেজুরা ভরপাশা গ্রামে জন্ম শাহনেওয়াজের। বাবা সৈয়দ শাহজাহান ছিলেন স্কুলশিক্ষক। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। বর্তমানে ইউপি সচিব পদে কাজ করছেন নিয়ামতি ইউনিয়নে। যখন যেখানে ছিলেন, সেখানেই বেপরোয়া দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ১০ হাজার টাকা বেতন স্কেলে চাকরিতে যোগ দেওয়া এই সচিবের বিরুদ্ধে। নিজ এলাকা ভরপাশায় জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। এলাকার তিন শতাধিক মানুষের স্বাক্ষরে ওই অভিযোগ করা হয়। লিখিত দরখাস্তে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের স্বাক্ষর জাল করে টাকা আত্মসাৎ, ভূমি করের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে পকেটস্থ করা, ইউপি আদালতে মামলা করতে আসা লোকজনের কাছ থেকে ঘুস আদায়, কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিকানা, এমনকি ধর্ষণ মামলার আসামি হওয়ার অভিযোগও করা হয় তার বিরুদ্ধে। যদিও সেসব অভিযোগে কিছুই হয়নি তার। চাকরি করছেন বহাল তবিয়তে।

জেলা প্রশাসক বরাবর নিয়ামতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবিরের দেওয়া এক অভিযোগে জানা যায়, ৮ বছর ধরে সেখানে আছেন তিনি। গত বছরের ১১ এপ্রিল নিয়ামতি ইউনিয়নের জন্য ৩৫ হাজার এবং ২১ হাজার টাকার দুটি বরাদ্দ আসে সরকারিভাবে। অফিস থেকে তা গ্রহণ করলেও আজ পর্যন্ত ব্যাংকে জমা কিংবা চেয়ারম্যানকে দেননি শাহনেওয়াজ। জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ও পরিষদ ভবনে গোপনে জামায়াতের কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান হুমায়ুন। সরেজমিন পরিদর্শনে মেলে শাহনেওয়াজের আরও নানা দুর্নীতির প্রমাণ।

পশ্চিম কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ হাওলাদার বলেন, পরিষদে মামলা করতে গেলে ৫শ টাকা করে নেয় শাহনেওয়াজ। টাকা না দিলে মামলা হয় না।

ঢালমারা গ্রামের আদম আলী বলেন, ‘আমার কাছ থেকেও ৪শ টাকা নিয়েছে সে।’ ইউনিয়নের সুলতান আহম্মেদ, রওশনারা বেগম, ফুলবরু বিবি, হালিম হাওলাদার, খলিলুর রহমান, শাহনাজ আখতার, রঙ্গলাল সাহা, রমেশ চন্দ্রসহ আরও ২৫/৩০ জন করেন একই অভিযোগ।

করের টাকা আদায় করে তা জমা না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে। ১শ পৃষ্ঠার এরকম দুটি রসিদ বই মিলেছে, যেগুলোয় স্বাক্ষর করে বিপুল অর্থ আদায় করলেও তা পরিষদের হিসাবে জমা দেননি শাহনেওয়াজ। চেয়ারম্যান হুমায়ুন বলেন, আয়ব্যয়ের যে হিসাব তিনি দিয়েছেন তাতে এই অর্থের উল্লেখ নেই।

গ্রাম আদালতে মামলা করে বিচারের অপেক্ষায় থাকা একাধিক বাদী বলেন, ‘যতবার মামলায় তারিখ পড়ে, ততবারই তাকে দিতে হয় ঘুস। পরিষদে যে কোনো কাজের জন্য এলে ৫ শত থেকে ৫ হাজার’ টাকা না দিলে তা করে না সে।’

ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার খায়রুল আলম মুনসুর বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সহ্য করতে পারে না শাহনেওয়াজ। পরিষদে গেলে বসতে পর্যন্ত বলে না। যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে। জিজ্ঞেস করলে বলে, আমাদের নাকি দেশের আর কোনো দরকার নেই। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্যও করে। এ ব্যাপারে আমরা ডিসির কাছে অভিযোগ দিয়েছি।

বিপুল সম্পদের সন্ধান মিলেছে শাহনেওয়াজের। বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডে ৫ তলা ফাউন্ডেশন করা ২ তলা একটি আলিশান বাড়ি রয়েছে তার। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। পাদ্রিশিবপুর ইউনিয়নের নিউমার্কেট এলাকায় ৪ শতাংশ জমির ওপর রয়েছে ২ কোটি টাকা মূল্যের ৪ তলা ভবন। রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কালীগঞ্জ বাজারে আছে পাকা দেওয়ালে ঘেরা ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ৬ শতাংশ জমি। খাজুরা ভরপাশা গ্রামে রয়েছে পাকা ভবন। একই গ্রামে ২০ লাখ টাকা বাজার মূল্যের কৃষিজমিও রয়েছে তার।

আপন ছোট ভাই জহিরুল ইসলামের অর্থ আত্মসাৎ ও মারধরের ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেন জহিরুল। অভিযোগের সাক্ষী হন তার মা মমতাজ বেগম। জমি দখলসংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বড় ছেলে সৈয়দ সাকিব আছহাবকে চীনের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান তিনি। বাকেরগঞ্জের বাইরে বরিশাল-ঢাকাসহ আরও বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে তার অর্থসম্পদ। শাহনেওয়াজের স্ত্রী সাদেকা বেগম শিক্ষকতা করেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এছাড়া দৃশ্যমান আর কোনো আয় নেই এই পরিবারের।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সব অস্বীকার করেন শাহনেওয়াজ। বৈধ উপায়ে সব অর্জিত-দাবি তার। মারা যাওয়ার আগে তার বাবা বিপুল সম্পদ রেখে গেছেন জানিয়ে শাহনেওয়াজ বলেন, ‘খেজুরা ভরপাশা ও পাদ্রিশিবপুর নিউমার্কেটের ভবন আমার একার নয়। পারিবারিক বিরোধ কিংবা জমিজমা সংক্রান্ত শত্রুতায় মামলা হতেই পারে। তাই বলে আমি যে সবকিছু অসৎ আয় করেছি তা নয়। চীনে পড়াশোনা করলেও বড় ছেলে বর্তমানে দেশেই আছে। স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে অনেক কিছু দাবি করে না পেয়ে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, নিয়ামতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে দুটি অভিযোগ পেয়েছি। দুটি অভিযোগেই তাকে নিয়ামতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।অচিরেই তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 Somoyexpress.News
Theme Customized By BreakingNews