হঠাৎই গরুর মাংসের দাম আবারো বেড়ে গেল ৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিকেজি এখন আবার ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একটু দেখেশুনে নিতে চাইলে অনেক ক্ষেত্রে দাম আরও ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। তবে কোনো কোনো বিক্রেতা এখনো ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করছেন।
রাজধানীর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, একটু ভালো মানের মাংস সরবরাহ করতে গেলে অনেক সময় ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেও ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে মূল্যবৃদ্ধির পরে বেচাকেনা কিছুটা কমতে শুরু করে বলে জানা যায়।
খামারি, গরু ব্যবসায়ী, কসাই ও ক্রেতা-সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে গরুর মাংসের দাম যখন বেশি ছিল, তখন বেচাকেনা অনেক পড়ে গিয়েছিল। মাংসের দাম কম রাখার পরে বেচাবিক্রি অনেকটাই বেড়েছিল। প্রতি কেজি মাংসের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমার ফলে অনেকে সারিতে দাঁড়িয়েও মাংস কিনেছিলেন।
কিন্তু সেই চিত্র এক মাসের বেশি স্থায়ী হয়নি। মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বেচাকেনাও আবার কমে এসেছে। মাংসের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিক্রেতারা গরুর মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তুজা বলেন, ‘অনেকে কোরবানির জন্য গরু মজুত করা শুরু করেছেন। তাতে এখন আর কম দামে গরু পাওয়া যাচ্ছে না। যার জন্য মাংসের দাম বাড়াতে হয়েছে। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে না পারছি ক্রেতাদের দাবি রক্ষা করতে, না পারছি ব্যবসা করতে। মাংসের বাজারে একটা উভয়সংকট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
তবে এ বিষয়ে মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান। তিনি বলেন, এক মাসের মধ্যে গরুর মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। কারণ, উৎপাদন খরচ নতুন করে বাড়েনি। আবার এই সময়ের মধ্যে সরবরাহেও বড় কোনো সংকট তৈরি হয়েছে, তা-ও বলা যাবে না। তবে গোখাদ্যের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধির কারণে সময়ে সময়ে অনেক খামারি উৎপাদন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাংস উৎপাদন হয়েছিল ৮৭ লাখ টন। ওই বছর দেশের বাজারে মাংসের চাহিদা ছিল ৭৬ লাখ টন। ফলে চাহিদার তুলনায় ১১ লাখ টন বেশি মাংস উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও বাজারে মাংসের দাম ছিল বেশি। অবশ্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাংস উৎপাদন এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার টন কম হয়েছিল।
দেশে বিদায়ী ২০২৩ সালের মার্চ মাসে প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ৮০০ টাকা। তখন থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত তা ছিল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। পাঁচ বছর আগে দেশের বাজারে গরুর মাংসের দাম ছিল ৪৭০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি।
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে নাসির উদ্দিন নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘কিছুদিন গরুর মাংস বেশ কমে কিনেছি। এখন আবার বাড়ল। এতে করে খরচ আবার বাড়বে। তাতে কেনাকাটা কমাতে হবে।’ অবশ্য রোজার আগে মাংসের দাম প্রতিবারই এক দফা বাড়তে দেখা যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নাঈম সজল
সময় এক্সপ্রেস নিউজের সম্পাদক ও প্রকাশক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
Leave a Reply