পরিচালক সমিতির বনভোজনে অনিয়ম-পরিচালক ও সাংবাদিকদের বর্জন
- আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
বিনোদন প্রতিবেদক: কয়দিন আগেই জানানো হয়েছিল ৭ ফেব্রুয়ারি (বুধ বার) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বার্ষিক বনভোজন। এর আগেই গুঞ্জন ওঠে – বার্ষিক বনভোজনের খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সমিতির বর্তমান কমিটি। নিজেদের অপারগতা ঢাকতে সীমিত পরিসরে এবারের বনভোজন আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। এটা নিয়ে সমিতির সদস্যদের মাঝে চরম ক্ষোভ আর হতাশা দেখা দিয়েছে বলে গুঞ্জন চলছে। আর এই গুঞ্জনকে উস্কে দিয়েছে সমিতির সদস্য রফিক সিকদারের একটি ফেসবুক পোস্টে। পাঠকদের জন্য রফিক শিকদারের সেই ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
ধরুন আপনি একজন চলচ্চিত্র পরিচালক। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির আপনি একজন গর্বিত সদস্য। আপনি অবিবাহিত। পরিবারে আপনার বাবা আছে, মা আছে, অবিবাহিত ভাই আছে, বোনও আছে। প্রতিবারের মতো এবারও আপনার প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বার্ষিক পারিবারিক মিলনমেলা – ২০২৪ হতে যাচ্ছে জেনে আপনি বেজায় আনন্দিত, উদ্বেলিত। আপনি জানেন নিয়ম অনুযায়ী পরিচালক সমিতির প্রত্যেক সদস্য তার পরিবারের ৫ জন সদস্যকে নিয়ে এই প্রাণের মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। এরই আলোকে পরিবারের কয়েকজনকে আপনি আগেই ৭ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক মিলনমেলায় যাওয়ার বিষয়ে বলে রেখেছেন। আপনার কথা অনুযায়ী পরিবারের সবাই ৭ ফেব্রুয়ারির প্রতীক্ষায় আছে।
অত:পর ৫ ফেব্রুয়ারি এফডিসিতে পরিচালক সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে দেখলেন আপনার নামে মাত্র একটি কার্ড ইস্যূ হয়েছে। যে কার্ডটি ব্যবহার করে আপনি একাই শুধু পারিবারিক মিলনমেলায় যেতে পারবেন। যেহেতু আপনি বিয়ে করেননি সেহেতু পরিবার বলতে আপনার কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। পরিবারে বাবা, মা, ভাই বোন থাকলেও এরা কেউ আপনার পরিবারের সদস্য নয়। আপনার পাঠ্য বই পরিবারের সংজ্ঞা সম্পর্কে আপনাকে যে শিক্ষা দিয়েছে সেটি বাড়িতে মনে রাখুন, পরিচালক সমিতিতে এসে ভুলে যান। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের বিচক্ষণতা এটাই দৃ্ঢ় চিত্তে বিশ্বাস করে এবং আপনাকে বিশ্বাস করাতে চায় যে – বউ বাচ্চা ব্যতীত পরিচালকের পারিবারিক কোনো কাঠামো থাকে না। বাবা মা ভাই বোন – এরা কেউই পরিবারের সদস্য নয়। এরা পরিবারের দূরের বস্তু।
এরপরও আপনি যদি পরিচালক সমিতির পারিবারিক মিলনমেলায় যেতে চান তাহলে আপনাকে একাই যেতে হবে। অন্যথায় বিয়ে করে বউকে পরিবারের সদস্যভুক্ত করুন। যদি শারীরিক বা পারিপ্বার্শিক কোনো অযোগ্যতা থেকেও থাকে অন্তত পরিচালক সমিতির পারিবারিক মিলনমেলায় পরিবারসহ যাওয়ার জন্য হলেও বিয়েটা করে ফেলুন। যদি নিজের বাচ্চা দানের ক্ষমতা না থাকে তাহলে অন্যের সাহায্য নিন। এতে বাচ্চাগুলো আপনার পরিবারের সদস্য নয় মর্মে আপনার সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ কখনোই প্রশ্ন তুলবে না। প্রশ্ন উঠবে তখনই যখন মূর্খের মতো নিজের জন্মদাতা, জন্মদাত্রী, ভ্রাতা, ভগিনীকে পরিবারের সদস্য দাবী করতে যাবেন।
শিক্ষায় দীক্ষায়, জ্ঞানে – গুণে আপনি তাদের হাঁটুর সমান বলেই বারবার আপনি তাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করছেন। তাই “বাবা মা নয়, বউ বাচ্চাই পরিবার” পরিচালক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সৃষ্ট নতুন এই সংজ্ঞাটি আপনার জন্য হতে পারে শতাব্দীর সেরা শিক্ষা। একই সঙ্গে পরিচালক সমিতির পরিবার গঠনের এই নীতি বাংলা একাডেমির জন্য হতে পারে চমকপ্রদ অনুপ্রেরণা।
#রফিক সিকদার
চলচ্চিত্রকার
ধারণা করা রফিক সিকদার তার এই ফেসবুক পোস্টে পরিচালক সমিতির বর্তমান সভাপতি কাজী হায়াৎ, মহাসচিব শাহীন সুমন, যুগ্ম মহাসচিব কবিরুল ইসলাম রানা এবং আরেক কর্মকর্তা শাহীন কবির টুটুলকে ইঙ্গিত করেছেন। আরও জানা গেছে, পরিচালক সমিতির এবারের বনভোজনে বিনোদন সাংবাদিকরাও বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নাঈম সজল
সময় এক্সপ্রেস নিউজের সম্পাদক ও প্রকাশক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
Leave a Reply