1. [email protected] : admins :
  2. [email protected] : Kanon Badsha : Kanon Badsha
  3. [email protected] : Nayeem Sajal : Nayeem Sajal
  4. [email protected] : News Editir : News Editir
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম: তাবরিজ যাচ্ছেন শীর্ষ কর্তারা এটিএন বাংলার চায়ের চুমুকে সংগঠক ও বিনোদন সাংবাদিক আবুল হোসেন মজুমদার হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর শঙ্কা প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন রফিকুল ইসলাম রফিক নামে এক ব্যক্তি সদস্যপদ ফেরত পেয়ে জায়েদ খান বললেন ‘সত্যের জয় হয়েছে’ বাচসাস’র সদস্যপদ নবায়নের আহ্বান বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবে, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের প্রকাশ্য এলো নিরব-রিফাতের ‘অবুঝ মনের প্রেম’ ২৪ মে মুক্তি পাচ্ছে নিরব-স্পর্শিয়ার ‘সুস্বাগতম’ সমাজকর্মী থেকে রাজনীতির মাঠে সাহিদা, করতে চান মেহনতী মানুষের সেবা

মাস্টারপ্ল্যানের অভাবেই পিছিয়ে যাচ্ছে বরিশাল

  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ জুলাই, ২০২৩

খান মেহেদী :- পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর, পর্যটন আর শিল্পায়নসহ বেশ উল্লেখযোগ্য অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে দক্ষিণে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে, বদলে যাচ্ছে বরিশাল বিভাগ।

তাহলে দরিদ্রতার হার কেন বাড়ছে বরিশালে? শিক্ষিতের বেশি হার নিয়েও কী কারণে অর্থনৈতিক উন্নতিতে সবার শেষে বরিশাল?

বিশ্লেষকরা বলছেন, উন্নয়ন পরিকল্পনার সমবণ্টন, অঞ্চলভিত্তিক মাস্টারপ্ল্যান ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সমন্বয়হীনতায় এই অঞ্চলে বেকারত্ব, শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠা, কৃষিখাতে বিপ্লব হয়নি। এছাড়া নিয়ন্ত্রণহীন দ্রব্যমূল্য এই অঞ্চলকে দরিদ্রতার কষাঘাতে বেশি জর্জরিত করেছে।

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের বয়া গ্রামের নৌকার কারিগর সাগর বলেন, পাঁচ বছর আগেও একটি নৌকা যে দামে বিক্রি করতে পারতাম এখনো তার কাছাকাছি দামে বিক্রি করছি। অথচ বাজারে নিত্যপণ্যের অনেক দাম বেড়েছে। ঘরে দুই ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করছে। সব মিলিয়ে দিন দিন আরও গরিব হয়ে যাচ্ছি।

হিজলা উপজেলার বাউশিয়া গ্রামের বাসিন্দা হারুন হাওলাদার ঢাকা বলেন, তিনবার বাড়ি করেছি। তিনবারই মেঘনা নদী নিয়ে গেছে। বয়স ষাটের কাছাকাছি। এখন আর উপার্জনের সামর্থ্য নেই যে নতুন করে বাড়ি বানাব। এজন্য আরেকজনের জমিতে ছাপরা ঘর বানিয়ে থাকছি। নদীভাঙন রোধে যদি ভালো পরিকল্পনা হতো তাহলে হয়ত দিনে দিনে আমাদের নিঃস্ব হতে হতো না।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৫নং ওয়ার্ড পলাশপুরের বাসিন্দা রিকশাচালক ইউনুস আলী ঢাকা বলেন, দিনে ৭০০ টাকা আয় করলে ৩০০ টাকা যায় রিকশা ভাড়ায়। তারপর যা থাকে তা দিয়ে দিনের বাজার, মাসের বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, গ্যাস সিলেন্ডার বিল দিতে হয়। যখন পায়ে চালানো রিকশা চালাতাম তখন ৫০ টাকা ছিল ভাড়া। যা পেতাম তাতে চলে যেত। কিন্তু এখন বেশি আয় করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আগেই ভালো ছিলাম।

পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান ঢাকা বলেন, বরিশাল বিভাগের একটি বড় অঞ্চল উপকূলীয় জনপদ। দক্ষিণাঞ্চলে পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দরের মতো অবকাঠামো গড়ে উঠলেও শিল্পায়ন ও কৃষিতে এর টেকসই প্রভাব পড়েনি। দক্ষিণাঞ্চলে কোনো অর্থনৈতিক জোন নেই। ভোলায় গ্যাস আছে কিন্তু তা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ পাচ্ছে না। ফলে অর্থনৈতিক উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে না। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতি বছর বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস আর পানির লবণাক্ততা কৃষি অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতি করছে। প্রতি বছর বাড়ছে নদীভাঙন। মানুষ প্রাকৃতিক কারণেই উদ্বাস্তু হচ্ছে। আর সৃষ্টি করা হচ্ছে না তেমন কর্মসংস্থান। বাজেটের কথা বলতে গেলে প্রতি বছরই বরিশাল বিভাগ ন্যায্য বরাদ্দ পাচ্ছে না। যে কারণে এমন পরিণতি হয়েছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ রিফাত ফেরদৌস ঢাকা বলেন, যেকোনো অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান জরুরি। বাংলাদেশেও অনুরূপ যে পরিকল্পনা হয় সেখানে অঞ্চল ভিত্তিক পরিকল্পনায় আমরা পিছিয়ে আছি।

তিনি আরও বলেন, সরকার দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে পদ্মা সেতু, পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ উন্নয়নে আগ্রহী। আমি আশা করি পরবর্তী অর্থবছরে বরিশাল বিভাগের উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হবে। যেহেতু বরিশাল অঞ্চলে দারিদ্রতার অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না, এখন কেন এতটা নিচে নেমে যাচ্ছে তা বদলাতে সরকারের অবশ্যই অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করা উচিত। অন্যথায় বরিশাল বিভাগের দরিদ্রতার হার আরও বাড়তে পারে।

বরিশালে গ্যাস সংযোগের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেওয়া বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, কয়েকটি রাস্তা বা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে একটি অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব নয়। অঞ্চলের উন্নয়ন করার জন্য মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন দরকার। শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়তা নিয়ে আসা দরকার।

তিনি আরও বলেন, বরিশালে গ্যাস সংযোগ নেই, রেল সংযোগ নেই। অর্থনৈতিক প্রণোদনার অভাবে দক্ষিণাঞ্চল শিল্পায়ন বঞ্চিত অনুন্নত অঞ্চল হিসেবে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিভিত্তিক বহুমুখী শিল্প, মৎস্য শিল্পের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই অঞ্চলে কোনো ইপিজেড তৈরি হয়নি। ভোলায় গ্যাস থাকলেও বরিশালে তার সংযোগ আনা হচ্ছে না। আমি মনে করি রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং রাজনৈতিক পরিবর্তন না থাকায় বরিশালের এই পরিণতি হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল রানা মনে করেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। বর্ধিত শিক্ষার হার, শস্য উৎপাদনে অগ্রসরতা, যোগাযোগ ব্যবস্থার বিস্ময়কর উন্নয়ন কিংবা পাওয়ার সেক্টরের উন্নতি যা-ই বলি না কেন, দারিদ্র্যের হার এগুলোর সঙ্গে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে যাবে তখনই যখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এগুলোর সুসমন্বয় হবে। উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল উপাদানের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা এবং উন্নয়ন টার্গেট নির্দিষ্ট করতে পারলে উন্নয়ন সম্ভব। সম্ভব দারিদ্র্যের হার হ্রাসকরণ।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আগে এই অঞ্চলের সম্ভাব্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের নানা কথা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেতু হলেও, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না; উন্নয়নের সঙ্গে দারিদ্র্যমোচন, কর্মসংস্থান ও উচ্চতর জীবনমানের প্রশ্নগুলো প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকায় এই ইনডেক্সগুলোকেই বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোকে আলাদাভাবে বিবেচনায় নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার বিকল্প দেখছি না। দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করে প্রাপ্ত গবেষণাগুলোর ফলাফল সমন্বয়পূর্বক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পায়রা বন্দর তার পূর্ণাঙ্গ রূপ পেলে, ব্যবহারযোগ্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও মানবসম্পদের সমন্বয়ে নতুন আর্থিক খাতের উন্মেষ ঘটতে পারে।

পরিসংখ্যান ব্যুরো বরিশাল বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায়ও অনেক এলাকা রয়েছে যা অত্যন্ত দারিদ্র্য। পলাশপুর, রসুলপুর, কেডিসি, বঙ্গবন্ধু কলোনিসহ বেশ কয়েকটি। বরিশাল বিভাগের মানুষের জীবনমান কমে যাওয়ার কারণ অনেকগুলো। মূল কারণ এই অঞ্চলের মানুষের আয় বাড়েনি। আর আয় বাড়ানোর উৎসও নেই।

তিনি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্যের যে প্রভাব বিপরীতে আয় বাড়েনি। আগেও যে কয় টাকা আয় করতেন এখনো সেই টাকা আয় করেন। দেখা যাচ্ছে যিনি জুতা সেলাই করেন তিনি দিনে ৩/৪ শ টাকা আয় করেন। ওদিকে বাজারে পাঙাস মাছের কেজি ১৩০ টাকা। এমনও দেখা গেছে কোরবানির সময়েই অনেক পরিবার শুধু গরুর মাংস খেতে পারছে।

তুলনামূলক আলোচনায় তিনি বলেন, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বরিশালে যেহেতু দারিদ্র্যের হার উচ্চমুখী, এখন পরিকল্পনা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান এই অঞ্চলটিকে কীভাবে উন্নয়ন করা যায় তা নিয়ে বিস্তর উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আমি আশা করি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2023 Somoyexpress.News
Theme Customized By BreakingNews